বেলপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ
বেল গাছ বাংলাদেশের মানুষের একটি অতিপরিচিত গাছ। এই গাছের বাকল,শিকড়,ফল,পাতা সবই মানব সাস্থ্যে বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে থাকে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেল পাতা বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। বেল পাতা এদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে।তাই এই কনটেন্ট এ বেলপাতার অপকারিতা এবং উপকারিতা ও এর রাসায়নিক গঠন,পটুভূমি এবং ব্যবহারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বেল পাতার গুরুত্বঃ
বেল পাতা প্রাচীন যুগ হতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এটি শুধু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা তে সীমাবদ্ধ নয়,এটি ডায়রিয়া,শ্বাসকষ্ট,জ্বর সহ আরো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তে ব্যবহৃত হয়। এই বেল পাতাই থাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান। যেমনঃ ফ্ল্যাভোনয়েড,ট্যানিন ও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
বেল পাতার রাসায়নিক গঠনঃ
বেল পাতায় রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যা মানব সাস্থ্যে বিশেষ ভুমিকা রাখে।বেল পাতায় যে উপাদান গুলো পাওয়া যায় তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১.ভিটামিন সিঃ এটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে।
২.ট্যানিনসঃ এটি হলো অতিশক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা মানুষের শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
৩.অ্যালকালয়েডসঃ এটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে।
৪.ফ্ল্যাভোনয়েডসঃ এই উপাদান টি মানব দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও বেল পাতাতে রয়েছে বিভিন্ন পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান।
বেল পাতার উপকারিতা ঃ
১.জ্বর কমাতে
জ্বর কমাতে বেল পাতার রস গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বেলপাতার রস বেশ ভুমিকা রাখে। এছাড়াও বেলপাতার রস আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে থাকে।
২.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
বেল পাতার রস মানব দেহের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। বেল পাতায় বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকাই ইহা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে থাকে।
৩.পাচনতন্ত্রের উন্নতি
বেল পাতার নির্যাস আমাদের হজম শক্তি কে বৃদ্ধি করে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে থাকে। এর মধ্যে থাকা ফাইবার ও ট্যানিনস আমাদের পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ও পাচনতন্ত্রকে সুরক্ষা রাখে।
৪.শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করতে
বেল পাতা শ্বাসনালীকে প্রশমিত করে ও শ্বাস নিতে সাহায্য করে। এছাড়াও বেলপাতা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ব্রংকাইটিস ও হাপানি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
৫.প্রদাহ নিরাময়
বেল পাতার মধ্যে রয়েছে প্রদাহবিরোধী উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৬.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
বেলপাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বেল পাতার অপকারিতা
১.এলার্জি
কিছু কিছু মানুষের বেলপাতা তে সংবেদনশীলতা থাকতে পারে,যা ত্বকের সমস্যা বা এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
২.গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান
গর্ভবতী মহিলা ও যারা স্তন্যদান করছেন তাদের বেলপাতা সেবনের আগে একজন ভাল চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে।
৩.অতিরিক্ত সেবনে সমস্যা
অতিরিক্ত বেল পাতা সেবন করলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।এর মধ্যে থাকা কিছু উপাদান শরীরের জন্য অতি ক্ষতিকর।
বেল পাতার ব্যবহার
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বেল পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।এটি আমাদের হজম শক্তি কে বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং বিভিন্ন প্রদাহ জনিত সমস্যা মোকাবেলায় ব্যবহৃত হয়।
প্রসাধনীতে
প্রসাধনী তৈরী করতে ও বেল পাতা ব্যবহৃত করা হয় কারন এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত করা হয়।বেল পাতার রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে।তাই ত্বকের উজ্জ্বল তা কে বাড়ানোর জন্য বেল পাতা ব্যবহার করা হয়
দৈনন্দিন জীবনে
দৈনন্দিন জীবনে বেলপাতা নানা ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন চা, বা জুস হিসেবে। এছাড়াও বাজারে বেলপাতার পাউডার কিনতে পাওয়া যাই যা বিভিন্ন রেসিপি তে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপসংহার
মুলত বেল পাতা একটি উপকারী উদ্ভিদ পাতা। এটি স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ভিতরে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান গুলো বিভিন্ন রোগে বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে।তবে বেলপাতা সেবনের আগে অবশ্যই এক জন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url